Thursday, November 7, 2019

কোরাণ মাজিদের ১০০ টি উপদেশ

Edited by Minhajuddin

১। তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশিয়ে দিও না। [সূরা বাকারা ২:৪২]

২। সৎকার্য নিজে সম্পাদন করার পর অন্যদের করতে বলো। [সূরা বাকারা ২:৪৪]

৩। পৃথিবীতে বিবাদ-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করো না। [সূরা বাকারা ২:৬০]

৪। কারো মসজিদ যাওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করো না। [সূরা বাকারা ২:১১৪]

৫। কারো অন্ধানুসরণ করো না। [সূরা বাকারা ২:১৭০]

৬। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করো না। [সূরা বাকারা ২:১৭৭]

৭। ঘুসে লিপ্ত হয়ো না। [সূরা বাকারা ২:১৮৮]

৮। যারা তোমাদের সঙ্গে লড়াই করবে, শুধু তাদের সঙ্গে তোমরা লড়াই করো। [সূরা বাকারা ২:১৯০]

৯। লড়াইয়ের বিধি মেনে চলো। [সূরা বাকারা ২:১৯১]

১০। অনাথদের রক্ষণাবেক্ষণ করো। [সূরা বাকারা ২:২২০]

১১। রজঃস্রাব কালে যৌনসঙ্গম করো না। [সূরা বাকারা ২:২২২]

১২। শিশুকে পূর্ণ দুই বছর দুগ্ধপান করাও। [সূরা বাকারা ২:২৩৩]

১৩। সৎগুণ দেখে শাসক নির্বাচন করো। [সূরা বাকারা ২:২৪৭]

১৪। দ্বিনের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই। [সূরা বাকারা ২:২৫৬]

১৫। প্রতিদান কামনা করে দাতব্য বিনষ্ট করো না। [সূরা বাকারা ২:২৬৪]

১৬। প্রয়োজনে তাদের সহযোগিতা করো। [সূরা বাকারা ২:২৭৩]

১৭। সুদ ভক্ষণ করো না। [সূরা বাকারা ২:২৭৫]

১৮। যদি ঋণীঅভাবগ্রস্তহয়তবে তাকে সচ্ছলতা আসা পর্যন্ত সময় দাও। [সূরা বাকারা ২:২৮০]

১৯। ঋণের বিষয় লিখে রাখো। [সূরা বাকারা ২:২৮২]

২০। আমানত রক্ষা করো। [সূরা বাকারা ২:২৮৩]

২১। গোপন তত্ত্ব অনুসন্ধান করো না এবং পরনিন্দা করো না। [সূরা বাকারা ২:২৮৩]

২২। সমস্ত নবির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করো। [সূরা বাকারা ২:২৮৫]

২৩। সাধ্যের বাইরে কারো উপর বোঝা চাপিয়ে দিও না। [সূরা বাকারা ২:২৮৬]

২৪। তোমরা পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ো না। [সূরা আল-ইমরান ৩:১০৩]

২৫। ক্রোধ সংবরণ করো। [সূরা আল-ইমরান ৩:১৩৪]

২৬। রূঢ় ভাষা ব্যবহার করো না। [সূরা আল-ইমরান ৩:১৫৯]

২৭। এই বিশ্বের বিস্ময় ও সৃষ্টি নিয়ে গভীর চিন্তাভাবনা করো। [সূরা আল-ইমরান ৩:১৯১]

২৮। পুরুষ ও নারী উভয়ই তাদের কৃতকর্মের সমান প্রতিদান পাবে। [সূরা আল-ইমরান ৩:১৯৫]

২৯। মৃতের সম্পদ তার পরিবারের সদস্যসের মাঝে বন্টন করতে হবে। [সূরা নিসা ৪:৭]

৩০। উত্তরাধিকারের অধিকার নারীদেরও আছে। [সূরা নিসা ৪:৭]

৩১। অনাথদের সম্পদ আত্মসাৎ করো না। [সূরা নিসা ৪১০]

৩২। যাদের সাথে রক্তের সম্পর্ক তাদের বিবাহ করো না। [সূরা নিসা ৪:২৩]

৩৩। অন্যায়ভাবে কারো সম্পদ ভক্ষণ করো না। [সূরা নিসা ৪:২৯]

৩৪। পরিবারের উপর কর্তৃত্ব চালাবে পুরুষ। [সূরা নিসা ৪:৩৪]

৩৫। অন্যদের জন্য সদাচারী হও। [সূরা নিসা ৪:৩৬]

৩৬। কার্পণ্য করো না। [সূরা নিসা ৪:৩৭]

৩৭। বিদ্বেষী হয়ো না। [সূরা নিসা ৪:৫৪]

৩৮। মানুষের সাথে ন্যায়বিচার করো। [সূরা নিসা ৪:৫৮]

৩৯। একে অপরকে হত্যা করো না। [সূরা নিসা ৪:৯২]

৪০। বিশ্বাসঘাতকদের পক্ষ নিয়ে বিতর্ক করো না। [সূরা নিসা ৪:১০৫]         

৪১। ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকো। [সূরা নিসা ৪:১৩৫]

৪২। সৎকার্যে পরস্পরকে সহযোগিতা করো। [সূরা মায়িদা ৫:২]

৪৩। সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। [সূরা মায়িদা ৫:২]

৪৪। মৃত পশু, রক্ত ও শূয়োরের মাংসা নিষিদ্ধ। [সূরা মায়িদা ৫:৩]

৪৫। সৎপরায়ণ হও। [সূরা মায়িদা ৫:৮]

৪৬। অপরাধীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাও। [সূরা মায়িদা ৫:৩৮]

৪৭। পাপ ও অবৈধ জিনিসের বিরুদ্ধে শ্রম ব্যয় করো। [সূরা মায়িদা ৫:৬৩]

৪৮। মাদক দ্রব্য ও আলকোহল বর্জন করো। [সূরা মায়িদা ৫:৯০]

৪৯। জুয়া খেলো না। [সূরা মায়িদা ৫:৯০]

৫০। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের উপাস্যদের গালমন্দ করো না। [সূরা মায়িদা ৫:১০৮]

৫১। আধিক্য সত্যের মানদণ্ড নয়। [সূরা আন’আম ৬:১১৬]

৫২। মানুষকে প্রতারণা দেওয়ার জন্য ওজনে কম দিও না। [সূরা আন’আম ৬:১৫২]

৫৩। অহংকার করো না। [সূরা আ’রাফ ৭:১৩]

৫৪। পানাহার করো, কিন্তু অপচয় করো না। [সূরা আ’রাফ ৭:৩১]

৫৫। সালাতে উত্তম পোশাক পরিধান করো। [সূরা আ’রাফ ৭:৩১]

৫৬। অন্যদের ত্রুটিবিচ্যুতি ক্ষমা করো। [সূরা আ’রাফ ৭:১৯৯]

৫৭। যুদ্ধে পশ্চাদ্‌মুখী হয়ো না। [সূরা আনফাল ৮:১৫]

৫৮। যারা নিরাপত্তা কামনা করছে তাদের সহযোগিতা করো ও নিরাপত্তা দাও। [সূরা তওবা ৯:৬]

৫৯। পবিত্র থেকো। [সূরা তওবা ৯:১০৮]

৬০। আল্লাহ্‌ তাআলার অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়ো না। [সূরা ইউসুফ ১২:৮৭]

৬১। যারা অজ্ঞতাবশত ভুলত্রুটি করে আল্লাহ্‌ তাআলা তাদেরকে ক্ষমা করবেন। [সূরা নাহ্‌ল ১৬:১১৯]

৬২। প্রজ্ঞা ও উত্তম নির্দেশনা দ্বারা আল্লাহ্‌ তাআলার প্রতি আহ্বাব করা উচিত। [সূরা নাহ্‌ল ১৬:১১৯]

৬৩। কেউ কারো পাপের বোঝা বহন করবে না। [সূরা ইসরা ১৭:১৫]

৬৪। পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করো। [সূরা ইসরা ১৭:২৩]

৬৫। পিতামাতাকে অশ্রদ্ধা করে কোনো কথা বলো না। [সূরা ইসরা ১৭:২৩]

৬৬। অর্থ অপচয় করো না। [সূরা ইসরা ১৭:২৯]

৬৭। দারিদ্রের আশঙ্কায় সন্তানসন্ততিকে হত্যা করো না। [সূরা ইসরা ১৭:৩১]

৬৮। অবৈধ যৌনাচারে লিপ্ত হয়ো না। [সূরা ইসরা ১৭:৩২]

৬৯। যে বিষয়ে জ্ঞান নেই তার অনুবর্তী হয়ো না। [সূরা ইসরা ১৭:৩৬]

৭০। শান্তভাবে কথা বলো। [সূরা ত্বা-হা ২০:৪৪] 

৭১। অনর্থ জিনিস থেকে দূরে থেকো। [সূরা মু’মিনুন ২৩:৩]

৭২। অনুমতি ছাড়া কারো গৃহে প্রবেশ করো না। [সূরা নূর ২৪:২৭]

৭৩। যারা শুধু আল্লাহ্‌ তাআলার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেন তিনি তাদেরকে নিরাপত্তা দেন। [সূরা নূর ২৪:৫৫]

৭৪। বিনা অনুমতিতে পিতামাতার ব্যক্তিগত ঘরে প্রবেশ করো না। [সূরা নূর ২৪:৫৮]

৭৫। বিনয় সহকারে ভূপৃষ্ঠে বিচরণ করো। [সূরা ফুরকান ২৫:৬৩]

৭৬। এই পৃথিবীতে তুমি তোমার অংশকে উপেক্ষা করো না। [সূরা কাসাস ২৮:৭৭]

৭৭। আল্লাহ্‌র সাথে অন্য কোনো বাতিল উপাস্যকে ডেকো না। [সূরা কাসাস ২৮:৮৮]

৭৮। সমকামিতায় লিপ্ত হয়ো না। [সূরা আন্‌কাবুত ২৯:২৯]

৭৯। সৎকার্যের আদেশ করো এবং অসৎকার্য হতে নিষেধ করো। [সূরা লোকমান ৩১:১৭]

৮০। দম্ভভরে ভুপৃষ্ঠে বিচরণ করো না। [সূরা লোকমান ৩১:১৮] 

৮১। কণ্ঠস্বর অবনমিত রেখো। [সূরা লোকমান ৩১:১৯]

৮২। নারীরা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে। [সূরা আহ্‌যাব ৩৩:৩৩]

৮৩। আল্লাহ্‌ তাআলা যাবতীয় পাপ মোচন করে দিতে পারেন। [সূরা যুমার ৩৯:৫৩]

৮৪। আল্লাহ্‌ তাআলার অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়ো না। [সূরা যুমার ৩৯:৫৩]

৮৫। ভালো দ্বারা মন্দ প্রতিহত করো। [সূরা হা-মিম সাজদা ৪১:৩৪]

৮৬। যেকোনো বিষয়ে পরামর্শের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নাও। [সূরা শূরা ৪২:৩৮]

৮৭। মানুষের সাথে মানিয়ে চলার চেষ্টা করো। [সূরা হুজরাত ৪৯:৯]

৮৮। কাউকে পরিহাস করো না। [সূরা হুজরাত ৪৯:১১]

৮৯। সন্দেহ থেকে বিরত থেকো। [সূরা হুজরাত ৪৯:১২]

৯০। পরনিন্দা করো না। [সূরা হুজরাত ৪৯:১২]

৯১। সবচেয়ে আল্লাহ্‌ভীরু ব্যক্তি সবচেয়ে সম্মাননীয়। [সূরা হুজরাত ৪৯:১৩]

৯২। অতিথির সম্মান করো। [সূরা যারিয়াত ৫১:২৬]

৯৩। দাতব্যকার্যে অর্থ ব্যয় করো। [সূরা হাদিদ ৫৭:৭]

৯৪। দ্বিনের মধ্যে বৈরাগ্যের কোনো স্থান নেই। [সূরা হাদিদ ৫৭:২৭]

৯৫। জ্ঞানীজনকে আল্লাহ্‌ তাআলা সুউচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করবেন। [সূরা মুজাদালাহ্‌ ৫৮:১১]

৯৬। অমুসলিমদের সাথে সদয় ও ন্যায় আচরণ করো। [সূরা মুমতাহিনাহ্‌ ৬০:৮]

৯৭। লোভ-লালসা থেকে সুরক্ষিত থেকো। [সূরা তাগাবুন ৬৪:১৬]

৯৮। আল্লাহ্‌ তাআলার নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করো। তিনি মহাক্ষমাশীল ও অসীম দয়ালু। [সূরা মুযযাম্মিল ৭৩:২০]

৯৯। ভিক্ষুককে ধমক দিও না। [সূরা যুহা ৯৩:১০]

১০০। অভাবগ্রস্তকে খাদ্যদানের প্রতি উৎসাহ প্রদান করো। [সূরা মা’ঊন ১০৭:৩]

উমর কুশি ও ঈদে যাহরা উৎযাপনের ইতিহাস


Edited by Minhajuddin
ঈদ মানুষের জীবনে নিয়ে আসে অনাবিল আনন্দ। আর সেই ঈদকে কেন্দ্র করে সকল মু’মিনরা এক স্থানে সকল ভেদাভেদকে ভুলে একত্রিত হয় এবং তাদের ঈমানী খুশির বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। তেমনি একটি ঈদের নাম ঈদের যাহরা। যা সকল মুসলমানদের উৎযাপন করা উচিত। কিন্তু শুধুমাত্র আহলে বাইত (আ.)এর অনুসারীরাই তা উৎযাপন করে থাকেন।
ঈদের যাহরা বা “উমর কুশি” নিয়ে বিভিন্ন মতামত বর্ণিত হয়েছে কেউ বলেন: উক্ত ঈদটি উৎযাপন করা ঠিক না, আবার কারো মতে কোন অসুবিধা নাই। আর তাই ঈদে যাহরা উৎযাপনের কারণ ও তার ইতিহাস সম্পর্কে আজকে আমরা আলোচনা করবো।
ঈদে যাহরা সম্পর্কে ভুল চিন্তাধারার অপনোদন:
প্রকৃত পক্ষে ঈদে যাহরা আহলে বাইত (আ.)দের শত্রুদের বিনাশকে কেন্দ্র করে উৎযাপন করা হয়ে থাকে এবং তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি তা হচ্ছে ইমাম মাহদী (আ.)এর ইমামতের প্রথম দিন। সুতরাং উক্ত ঈদে ইমাম মাহদী (আ.)এর ইমামত সম্পর্কে আমাদের বেশী আলোচনা করা উচিত। যেন উক্ত মাহফিল দ্বারা আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং ইমাম (আ.)এর ফযিলত ও তাঁদের ইমামত সম্পর্কে আরো বেশী অবগত হতে পারি।
আয়াতুল্লাহ সৈয়দ হাসান মুস্তাফাভি যিনি একজন কোরআন ও নৈতিকতার ওস্তাদ। তিনি উক্ত ঈদকে কেন্দ্র করে উৎযাপিত অনুষ্ঠান সম্পর্কে বলেছেন: ঈদে যাহরা বা ওমর কুশি যা আহলে বাইত (আ.)এর অনুসারীগণ উৎযাপিত করে থাকে তাদের উদ্দেশ্য উমর ইবনে খাত্তাব না বরং তাদের উদ্দেশ্যে হচ্ছে উমর ইনে সাআদ, যে ছিল কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনার একজন খলনায়ক। ঘটনাক্রমে উমর ইবনে খাত্তাব এবং উমর ইবনে সাআদ এ দুইটি নামের মধ্যে উমর নামটি সদৃস্যপূর্ণ থাকার কারণে অনেকই মনে করেন যে আহলে বাইত (আ.)এর অনুসারীগণ হজরত উমর ইবনে খাত্তাবের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠানটি উৎযাপন করে থাকেন। প্রকৃতপক্ষে উক্ত ধারণাটি হচ্ছে ভুল। কেননা যদি আমরা হজরত উমরের মৃত্যর ঘটনার প্রতি দৃষ্টিপাত করি তাহলে ইতিহাসে হজরত উমরের মৃত্যুবরণের ঘটনাটি এভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, হজরত উমরের ত্বত্তাবধানে অয়োজিত কমিটির বৈঠক চলার সময় পঞ্চাশ জন সৈনিকের একটি দলকে ভবনের বাইরে পাহারা দেয়ার রাখার জন্য তিনি নিযুক্ত করেন। বৈঠক চলাকালানী সময়ে আবদুর রহমান ইবনে আবি বকর ও আবদুর রহমান ইবনে আউফ জানান যে, তারা উমরকে হামলা করার জন্য ব্যবহৃত ছুরিটি দেখেছিলেন। আবদুর রহমান ইবনে আউফ জানান যে, তিনি হরমুজান, জাফিনা ও পিরুজকে হামলার এক রাত আগে সন্দেহজনকভাবে কিছু আলোচনা করতে দেখেন। তাকে দেখে তারা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে এবং একটি ছুরি মাটিতে পড়ে যায় যা উমরের উপর হামলা করার জন্য ব্যবহৃত ছুরির অবিকল ছিল। আবদুর রহমান ইবনে আবি বকর নিশ্চিত করেন যে, হামলার কয়েকদিন আগে তিনি এই ছুরিটি একবার হরমুজানের কাছে দেখেছিলেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছিল যে, মদীনায় বসবাসরত পারসিয়ানরা এই হামলার জন্য দায়ী। এতে উমরের সন্তান উবাইদুল্লাহ ইবনে উমর উত্তেজিত হয়ে মদীনার পারসিয়ানদের হত্যা করতে উদ্যত হন। তিনি হরমুজান, জাফিনা ও পিরুজের মেয়েকে হত্যা করেন। মদীনাবাসীরা তাকে আরও পারসিয়ানদের হত্যা করা ক্ষেত্রে বাধা দেয়। হজরত উমর এ সংবাদ জানতে পেরে উবাইদুল্লাহকে বন্দী করার নির্দেশ দেন এবং বলেন যে, পরবর্তী খলিফা উবাইদুল্লাহর ভাগ্য নির্ধারণ করবেন।
আহত হওয়ার তৃতীয় দিনে হিজরী ২৩ সনের ২৭ জিলহজ্জ বুধবার ৬৪৪ সালের ৩ নভেম্বর মারা যান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর ৭ নভেম্বর উসমান ইবনে আফফান তৃতীয় খলিফা হিসেবে তার উত্তরসুরি হন। দীর্ঘ আলোচনার পর বিচারে সিদ্ধান্ত হয় যে উবাইদুল্লাহ ইবনে উমরকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হবে না এবং এর পরিবর্তে তাকে রক্তমূল্য পরিশোধ করার নির্দেশ দেয়া হয়। উমরের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর তার সন্তানের মৃত্যুদন্ড জনসাধারণকে ক্ষিপ্ত করে তুলতে পারে এমন আশঙ্কায় উবাইদুল্লাহর শাস্তি হ্রাস পায়।
আয়াতুল্লাহ সৈয়দ হাসান মুস্তাফাভি বলেন: ঈদে যাহরাকে কেন্দ্র করে আমাদের এমন কিছু করা বা বলা উচিত না যার ফলে মুসলমানদের মাঝে বিভেদের সৃষ্টি হয়।
অনেকে আবার মনে করেন যে, ৯ই রবিউল আওয়ালকে কেন্দ্র করে “রোফেয়াল ক্বালাম” নামক হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। অনেকে মনে করেন যে, হাদীসটির বিষয়বস্তু হচ্ছে উক্ত দিনটিতে কোন প্রকার কাজের গুনাহকে লিপিবদ্ধ করা হবে না। (আর যারা প্রকৃত মু’মিন তারা কখনও পাপ কাজে লিপ্ত হয় না)।
অথচ পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে:
সে যে কথাই উচ্চারণ করে, তাই গ্রহণ করার জন্যে তার কাছে সদা প্রস্তুত প্রহরী রয়েছে। (সুরা ক্বাফ, আয়াত নং ১৮)
উল্লেখিত হাদীসটি এই আয়াতের সাথে সামন্জস্যপূর্ণ না। সুতরাং এর মূল্য কতটুকু হতে পারে তা আর বলার অবকাশ রাখে না।
অনেকে উক্ত অনুষ্ঠানে সাব (গালমন্দ করা) উচ্চারণ করে থাকেন যা মোটেও উচিত না। তবে এক্ষেত্রে আমরা বর্তমান ইসলামের শত্রুদের প্রতি লানত প্রেরণ করতে পারি।
(سب): এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে গালমন্দ করা, অবাঞ্চিত কথাবার্তা বলা, যা ইসলামের দৃষ্টিতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে।  لعن: এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে অভিসম্পাত করা, খোদার রহমত ও মাগফেরাত থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার জন্য দোয়া করা।
৯ই রবিউল আওয়াল তারিখে মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠান আয়োজনের দর্শন:
আয়াতুল্লাহ সৈয়দ হাসান মুস্তাফাভি বলেন: সন ২৬০ হিজরী ৯ই রবিউল আওয়াল হচ্ছে শিয়াদের ১২তম ইমাম ইমাম মাহদী (আ.)এর ইমামতের প্রথম দিন। কেননা ইমাম হাসান আসকারী (আ.)কে ৮ই রবিউল আওয়াল তারিখে শহীদ করা হয় এবং তাপরে ৯ই রবিউল আওয়াল তারিখে ইমাম মাহদী (আ.) ৫ বছর বয়সে ইমামতের পদমর্যাদায় অধিষ্টিত হন। অনেকই হয়তো চিন্তা করবেন যে, এটা কিভাবে সম্ভব? কিন্তু আমরা যদি ইমামতের ইতিহাসের প্রতি দৃষ্টিপাত করি তাহলে দেখতে পাব যে, ইমাম মোহাম্মাদ তাক্বি (আ.) ৮ বছর বয়সে এবং ইমাম আলী নাক্বি (আ.) ৬ বছর বয়সে ইমামতের পদে আসীন হন। ইমাম রেযা (আ.) তাঁর হতে বর্ণিত রেওয়ায়েতে পবিত্র কোরআন থেকে উল্লেখ করেছেন যে, হজরত ইয়াহিয়া (আ.) ৯ বছর বয়সে এবং হজরত ঈসা (আ.) শৈশবে নবুওয়াত লাভ করেন। সুতরাং শৈশবে ইমামতের পদে আসীন হওয়া নতুন কোন বিষয় না। সুতরাং উক্ত দিনে মু’মিনদের শেষ ইমামের ইমামতের প্রথম দিনে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা শরীয়াগত দিক থেকে কোন সমস্যা নেই।
কেন উক্ত ঈদকে ঈদে যাহরা নামে অভিহিত করা হয়?
আয়াতুল্লাহ সৈয়দ হাসান মুস্তাফাভি বলেন: এই ঈদকে “ঈদে যাহরা” নামে অভিহিত করার দুটি কারণ রয়েছে:
১- ৯ই রবিউল আওয়াল তারিখে ইমাম মাহদী (আ.) ইমামতের পদে আসীন হন এবং ইমামতের পৃষ্ঠপোষক হজরত ফাতিমা যাহরা (আ.)এর বংশের শেষ ইমাম যার কথা তিনি বিভিন্ন সময়ে উল্লেখ করেছিলেন। সেই ইমামের ইমামত অর্জনের দিন।
২- হজরত ফাতিমা (সা.আ.)এর প্রাণপ্রিয় সন্তান ইমাম হুসাইন (আ.)এর হত্যাকান্ডের খলনায়ক উমর ইবনে সাআদকে এই তারিখে হত্যা করা হয়। উমরে সাআদ হজরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.)এর প্রাণপ্রিয় সন্তান ইমাম হুসাইন (আ.) এবং তার বংশধরকে এজিদের নির্দেশে নিঃশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করেছিল এবং তাদের মর্মান্তিকভাবে শহীদ এবং শিশু ও নারীদেরকে বন্দি করেছিল। সে পাপী উমর ইবনে সাদের মৃত্যকে কেন্দ্র করে উক্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
৯ই রবিউল আওয়াল তারিখে খুশির অনুষ্ঠান সম্পর্কে অপপ্রচারের উৎস:
আয়াতুল্লাহ সৈয়দ হাসান মুস্তাফাভি বলেন: প্রাচীনকাল থেকেই ইসলামের শত্রুরা ইসলামে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করে যাচ্ছে। আর উক্ত শত্রুরাই ৯ই রবিউল আওয়ালে এমনকিছু কাজ করে যার মাধ্যমে শিয়া ও সুন্নীর মাঝে দ্বন্দের সৃষ্টি হয়। তারা প্রচার করে যে, শিয়ারা উক্ত দিনে মুসলমানদের খলিফা হজরত উমর ইবনে খাত্তাবকে অবঞ্চিত কথার্বাতা বলে। আসলে কি তাই?  বরং শিয়ারা উমর ইবনে সাআদ যে, ইমাম হাসাইন (আ.)কে হত্যা করে এবং তাঁর পরিবার পরিজনকে বন্দি করে এজিদের দরবারে উপস্থিত করেছিল। উমর ইবনে সাআদের হত্যাকে কেন্দ্র করে আনন্দ উৎযাপন বা খুশির অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে।
কেন ৯ই রবিউল আওয়াল তারিখে খুশির অনুষ্ঠানের আয়োজন করবো?
অনেকের মনে প্রশ্নের সঞ্চার হতে পারে যে, কেন ৯ই রবিউল আওয়াল তারিখে খুশির অনুষ্ঠানের আয়োজন করবো। কেউ যদি মনে করে যে, উক্ত দিনটি হচ্ছে ইমাম মাহদী (আ.)এর ইমামতের প্রথম দিন তাহলে এক্ষেত্রে কয়েকটি মতামত বর্ণিত হয়েছে যেমন: ৪ঠা রবিউল আওয়াল তিনি শাহাদত বরণ করেন। তবে প্রসিদ্ধ হচ্ছে যে তিনি ৮ই রবিউল তারিখে শাহাদত বরণ করেন এবং ৯ই রবিউল আওয়াল হচ্ছে ইমাম মাহদী (আ.)এর ইমামতের প্রথম দিন।  ইমাম আলী (আ.) হতে রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে যেখানে তিনি বলেছেন: পৃথিবীর সৃষ্টিকূলের প্রতি আল্লাহ তায়ালার বিশেষ দৃষ্টিপাত করেন এবং আমাদেরকে নির্বাচন করেন এবং আমাদের জন্য শিয়াদেরকে নির্বাচন করেন যেন তারা আমাদেরকে সাহায্যে করে, আমাদের আনন্দে আনন্দিত হয়, আমাদের দুঃখে দুঃখিত হয় এবং নিজেদের মাল ও জানকে আমাদের জন্য উৎসর্গ করে। তারা আমাদের হতে এবং আমরা তাদের হতে।
ঈদে যাহরা উৎযাপন সম্পর্কিত ইতিকথা:
ঈদে যাহরা প্রকৃপক্ষে মু’মিনদের জন্য একটি খুশির দিন কেননা উক্ত দিনে ইমাম হুসাইন (আ.)এর  হত্যাকান্ডে অংশগ্রহণকারী উমর ইবনে সাআদকে হত্যা করা হয় এবং ইমাম হাসান আসকারী (আ.)এর শাহাদতের পরে ইমাম মাহদী (আ.)এর ইমামতের প্রথম দিন। বিভিন্ন মারাজা-এ তাক্বলিদ এবং আলেমগণ উক্ত অনুষ্ঠানে কোন প্রকারের অবাঞ্চিত কথাবার্তা এবং আচরণ সম্পর্কে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। সুতরাং আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যেন ইসলামের শত্রুরা উক্ত বিষয়টিকে নিয়ে যেন কোন প্রকারের ষড়যন্ত্র করতে না পারে। উক্ত অনুষ্ঠানে এমন কোন কথাবার্তা বলা বা আচরণ করা উচিত না যাতে মুসলমানদের মধ্যে বিভেদের সৃষ্টি হয়।

তথ্যসূত্র:
১- মেসবাহে কাফআমী, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৫৩৩।
২- বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৫০, পৃষ্ঠা ৩৩১, ৩৩৫, খন্ড ৫২, পৃষ্ঠা ১৬, খন্ড ৪৪, পৃষ্ঠা ২৮৭।
৩- মাশারুশ শিয়া, পৃষ্ঠা ২৮- ২৯।
৪- কামাল উদ্দিন, শাইখ সাদুক্ব, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৪৭৩।
৫- আল গ্বিবা, পৃষ্ঠা ২৭৩।
৬- যাদুল মাআদ, অধ্যায় ৮, পৃষ্ঠা ২২৫।
৭- যাওয়ায়েদুল ফাওয়ায়েদ,  অধ্যায় রবিউল আওয়াল।

শিষ্ঠাচার

Edited by Minhajuddin

আসুন একটু জেনে রাখি, আরেকটু মেনে চলার চেষ্টা করিঃ

১. একটানা দু'বারের বেশি কাউকে কল করবেন না। যদি তারা আপনার কলটি গ্রহণ না করে,, তার অর্থ হল,, তারা হয়তো আপনার ফোনটির থেকে আরও গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজে ব্যাস্ত আছে।

২. কারো থেকে কিছু ধার করে থাকলে,, দ্বিতীয় ব্যক্তি চাওয়ার আগে তার ধার শোধ করুন। এতে আপনার কর্তব্যপরায়ণতা ও চরিত্র প্রকাশ পায়।

৩. কেউ যখন আপনাকে মধ্যাহ্নভোজ বা রাতের খাবারের জন্য আমন্ত্রন করে তখন,,কখনই মেনুতে ব্যয়বহুল খাবারটি অর্ডার করবেন না। সম্ভব হলে তাদের পছন্দমতো খাবারের অর্ডার করতে বলুন।

৪. কারো কথার মাঝখানে কথা বলে বাঁধা সৃষ্টি করবেন না। আগে মনযোগ দিয়ে শুনুন,, তারপর সময় নিয়ে উত্তর দিন।

৫. কেউ আপনাকে সহায়তা করলে তাকে ধন্যবাদ বলুন। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন।

৬. যখন কেউ আপনাকে তাদের ফোনে একটি ছবি দেখাতে চাইবে, তখন ফোনের বাম বা ডানদিকে সোয়াইপ করবেন না। কারন আপনি জানেন না এর পরে কি আছে। ...

৭. যদি আপনার কোনো বন্ধু আপনাকে বলে যে তার ডাক্তারের সাথে অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে, তবে তাদের কখনোই আ্যপয়েন্টমেন্ট এর কারন বা রোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন না, শুধু বলতে পারেন,, আশা করি দ্রুত সুস্থ হও। যদি তারা এ বিষয়ে কথা বলতে চান, তবে তারা আপনাকে নিজে থেকেই বলবে। তাদের ব্যক্তিগত অসুস্থতা সম্পর্কে জানতে চেয়ে অস্বস্তিকর অবস্থার সৃষ্টি করবেন না ..

৮. অফিস কিংবা রাস্তায় একজন ক্লিনার কে ঠিক ততোটাই সম্মান দিয়েই কথা বলুন,, যতোটা আপনি আপনার অফিসের CEO কে দেন।

৯. দীর্ঘ সময় পরে কারও সাথে দেখা হলে,, তাদের বয়স এবং বেতন জিজ্ঞাসা করবেন না,, অবশ্যই যদি তারা এ ব্যাপারে কথা বলতে না চায়।

১০. রাস্তায় কারও সাথে কথা বলার সময় সানগ্লাসটি চোখ থেকে খুলে নিন। এটি শ্রদ্ধার নিদর্শন,, তাছাড়া চোখের যোগাযোগ বা আই কন্টাক আপনার বক্তব্যের মতোই গুরুত্বপূর্ণ ...

ধন্যবাদ।

মজিদুল ইসলাম শাহ

  ইরানের আলমুস্তাফা ইউনিভার্সিটি (কুম) এর ছাত্র। লেখক ও সাংবাদিক  (হাওজা নিউজ এজেন্সির বাংলা বিভাগ)